জীবন আরো গুছিয়ে তুলতে প্রতিদিন যে কাজগুলি করতে পারেন।
আমরা অনেকে স্বভাবতই পরিপাটি, অনেকে আবার সেরকম গোছালো না। তবে খুব গোছালো না হলেও কিছু অভ্যাস ও রুটিন বানিয়ে দৈনন্দিন জীবনকে অনেকটাই ঝামেলামুক্ত ও পরিপাটি রাখা সম্ভব।
একটু একটু করে এসব পরিবর্তনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আপনি নিজের জন্য সবচেয়ে ভাল উপায়গুলি আবিষ্কার করতে পারবেন।
এখানে থাকছে তেমনই ৮টি কৌশল।
☆ জরুরি জিনিসপত্র এক জায়গায় রাখুন ☆
চাবি, ওয়ালেট, মোবাইল, হেডফোন ও প্রতিদিন দরকার হয় এমন জিনিসপত্র একসাথে দরজার কাছে কোথাও রাখুন। যাতে বের হওয়ার সময় সহজেই নিতে পারেন ও ঘরে ফিরে সব গুছিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে অন্তত দরকারি কোনো কিছু হারিয়ে অফিসে বা কাজে যেতে দেরি হবে না।
ছোট ছোট অনুষঙ্গ, যেমন চাবি ও ফোন, রাখার জন্য সুন্দর বাক্স বা হোল্ডার কিনতে পারেন। ঘরে ঢোকার পথে এনট্রেন্স টেবিল কিংবা দেয়ালে লাগানো চাবির অর্গানাইজার খুব কাজে দেবে, আর জায়গাও বাঁচাবে।
☆ টু-ডু লিস্ট তৈরি করুন ☆
প্রতিদিন একটি করে টু-ডু লিস্ট বানান, এতে আগের দিনের বাকি থাকা কাজ ও নতুন কাজ লিখে নিন।
লিস্ট বানানো যদি আপনার দক্ষতার মধ্যে নাও পড়ে, যদি শুধু বড় প্রজেক্টগুলিই লিখে রাখার অভ্যাস থাকে, তাহলেও সেটা প্রতিদিন দেখুন।
কী কী কাজ শেষ করেছেন, ট্র্যাক করুন। কোনো কাজ যদি অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় মনে হয় তাহলে বাদ দিন। এতে করে আপনার ফলপ্রসূতা বাড়বে। অপ্রয়োজনীয় কাজে আটকে থাকবেন না।
দিনের শুরুতে অথবা শেষে টু-ডু লিস্ট বানান। দিনের মাঝে লিস্ট বানালে সে অনুযায়ী কাজ করা কঠিন হবে, কারণ দিনের অনেকটাই ততক্ষণে শেষ হয়ে যাবে। আর পরের দিনটি কেমন যাবে, কী করলে ভাল হবে, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা তখন পাওয়া যায় না।
☆ কাগজ ব্যবহার কমান ☆
প্রয়োজনীয় বিল ও স্টেটমেন্ট অনলাইনে ও ইমেইলে ডেলিভারি নিন। এতে ঘরে অপ্রয়োজনীয় কাগজের পরিমাণ কমবে, ঘর এলোমেলো হবে না।
বিলের পেমেন্ট এখন আমরা বেশিরভাগ সময় অনলাইনেই করি, তাই বিলও অনলাইনে নেওয়াই ভাল।
নিয়মিত সেভিংস অ্যাকাউন্টের দিকে নজর রাখুন, আয় ও ব্যয় চেক করুন। এতে করে আগের দিন কোথায় কত টাকা খরচ করেছেন তা জানতে পারবেন। অতিরিক্ত টাকা খরচের প্রবণতা অনেক কমবে এর কারণে। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে সেভিংস এর দিকে তাকালে সঞ্চয়ের মনোভাব বাড়বে।
☆ সবসময় একটা নোটপ্যাড সাথে রাখুন ☆
জীবনকে গোছালো করে তুলতে একটা পকেট সাইজ নোটবুক অত্যন্ত দরকারি ভূমিকা রাখবে আপনার জীবনে। শপিং লিস্ট, ছোটখাটো কাজ, টু-ডু লিস্ট, নানারকম চিন্তাভাবনা লিখে রাখুন এই নোটবুকে, এটা সবসময় নিজের সাথে রাখুন।
ছোট এই নোটবুক সহজে যেকোনো জায়গায় নেওয়া যায়, সুবিধামত ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া ডিভাইসের মত চার্জ দেওয়ার ঝামেলাও নেই। আমাদের সরাদিন যখন-তখন কিছু একটা লেখার দরকার হতে পারে, এমন সময়ে এই নোটবুক কাজে আসবে।
অনেকে নোট করার জন্য মোবাইলে অ্যাপে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বেশি। কিন্তু মোবাইল অ্যাপের কথা খুব জরুরি বিষয় না হলে আমাদের মনে পড়ে না। অন্যদিকে, নোটপ্যাড যেহেতু ধরা যায় ও ব্যাগ খুললেই চোখে পড়ে, আপনার নিজে থেকেই প্রয়োজনীয় অনেক কিছু লিখে রাখতে মন চাইবে। তাই সম্ভব হলে, পরের বার বের হওয়ার সময় একটি নোটবুক সাথে নিন।
☆ ওয়ালেট ডিক্লাটার করুন ☆
আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ওয়ালেট। এটি গোছানোর অভ্যাস গড়ে তোলা সবচেয়ে সহজ, সময়ও বেশি লাগে না। যখনই সময় পাবেন, যেমন টিভি দেখা বা যাতায়াতের সময় বসে বসে ওয়ালেটটি গুছিয়ে ফেলতে পারেন।
প্রথমেই দরকারি রিসিটগুলি যত্ন করে রাখুন। অপ্রয়োজনীয়গুলি ফেলে দিন। তারপর কার্ড গুছিয়ে নিন। বেশি ব্যবহার করা হয় এমন কার্ডগুলি সামনে রাখুন। খুচরা টাকা ও কয়েন বের করে একটি জার বা কন্টেইনারে রাখুন।
☆ মিল প্ল্যান করুন ☆
পরবর্তী কয়েক দিনের খাবারের পরিকল্পনা আগে থেকে করে রাখাই মিল প্ল্যান। প্রতিদিন অথবা কিছুদিন পরপর মিল প্ল্যান চেক করুন, যাতে প্ল্যানের সাথে মিল রেখে চলতে পারেন। প্রতিদিন চেক করা সবচেয়ে ভাল, এতে করে তা অভ্যাসে পরিণত হবে। দরকার অনুযায়ী যেকোনো সময় এই লিস্ট আপডেট করে নিতে পারবেন।
প্রতিদিন মিল প্ল্যান করলে কবে কোন খাবার বানাবেন সেটা মাথায় থাকবে, সে অনুযায়ী শপিং লিস্ট বানালে অপ্রয়োজনীয় খরচের হাত থেকেও বেঁচে যাবেন। যেসব জিনিসপত্র কিনে ফেলেছেন, তা লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিন। সবশেষে, কেনাকাটা ও রান্নাবান্নার জন্য সময় শিডিউল করুন।
☆ আগের রাতে পরদিন পরার কাপড় বের করে রাখুন ☆
পরের দিন অফিসে বা কাজে পরে যাওয়ার জামাকাপড় আগের রাতে তৈরি করে রাখলে অনেকখানি সময় বেঁচে যাবে। সকালে নিজে তৈরি হওয়ার সময় জামাকাপড় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও সময় লাগে। তাছাড়া সন্তান থাকলে তাদেরকেও স্কুলের জন্য তৈরি করতে অনেকটা সময় দরকার হয়।
এ কারণে আগের দিন জামাকাপড় বের করে রাখুন। তাহলে সকালবেলা আলমারি বা ওয়্যারড্রোবের সামনে দাঁড়িয়ে কী পরবেন সেটা ভাবতে হবে না।
☆ রুটিন মেনে চলুন ☆
টু-ডু লিস্ট তৈরির সময় কখন কাজগুলি করবেন তারও একটি পরিকল্পনা বানান। তাহলে টু-ডু লিস্টের কাজ শেষ করা সহজ হবে।
যেসব কাজকে ভয় পান, বা করতে অস্বস্তি বোধ হয়, সেগুলিও নির্ধারিত সময়ে হয়ে যাবে। আর প্রতিদিন কোনো একটা কাজ করার ফলে আপনার মনও ভাল থাকবে, কাজে আরো আগ্রহ পাবেন।
☆ প্লেটগ্লাস ধুয়ে রাখুন ☆
অনেকেই আপনাকে দিনের শুরুতে বিছানা গুছিয়ে রাখতে বলবে। এতে করে আপনার দিনের শুরুটা ইতিবাচক হবে।
এরকমই আরো একটা কাজ আছে, গোছালো থাকতে এর চর্চা করতে পারেন। এটা করতে হবে আগের রাতে। তা হল প্লেটগ্লাস, হাড়িপাতিল ধুয়ে রাখা। সপ্তাহের প্রতিদিনই যদি রান্নাবান্না করেন, তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অপরিষ্কার হাড়িপাতিল, প্লেটগ্লাস ধুয়ে নিন। তাহলে এগুলি জমে যাবে না।
এরকম ছোট ছোট অভ্যাসগুলিই আপনার দৈনন্দিন জীবন সহজ করার পাশাপাশি বড় সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে এবং অনেক সমস্যা ও সময়ের অপচয় থেকে রেহাই পাবেন।
Follow Us Google News
View (3,211) | Like (0) | Comments (0)