Bangla Express
Public | 26-Mar-2025

স্থানীয় গ্রামবাসীদের শিল্পকর্মের এক প্রতীক পুরুলিয়া জেলার পাখি পাহাড়।

পুরুলিয়ার নাম শুনলেই আমাদের মনে প্রথমেই ভেসে ওঠে চড়িদা গ্রামের কথা। ভেসে ওঠে লাল মাটির রাস্তায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছবি। যে গ্রাম ছৌ নাচের মুখোশ তৈরীর জন্য আজ পৃথিবী বিখ্যাত। পশ্চিমবাংলার পশ্চিমে অবস্থিত এই জেলাটি সারা রাজ্য তথা ভারতবাসীর পর্যটনের অন্যতম এক আকর্ষণ। শীত মানে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, চড়িদা গ্রাম সেইসঙ্গে আরো দুই একটি টুরিস্ট স্পট পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ❍ এ তো গেল শীতকালের কথা। আর বসন্ত কালে পুরুলিয়ার নাম শুনলে আমাদের শিমুল, পলাশের কথাই সবার আগে মাথায় আসবে। রাঢ় বাংলার সরু লাল পথ কিংবা পাহাড়ের ঢালু উপত্যকা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। তবে এই জায়গাটি পুরুলিয়ার আর পাঁচটা জায়গার মতো নয়। প্রায় চাপা পড়ে যাওয়া পাখি পাহাড়-এর টানে অনায়াসে বেরিয়ে পড়া যায় দুটো দিন। নাম শুনে মনে হতে পারে অনেক পরিযায়ী পাখির আবাস এই জায়গা। নাম শুনে মনে হতে পারে হয়তো এটি শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল। ❍ কিন্তু ব্যাপারটি সেরকম একেবারেই নয়। একটি অনুচ্চ পাহাড়ের গায়ে অসংখ্য উড়ন্ত পাখির প্রতিচ্ছবি আঁকা। বেশিরভাগ পর্যটক পাহাড়টি দূর থেকে দেখে ফিরে যান। অযোধ্যা পাহাড় থেকে সামান্য দূরে হওয়ায় লোকজন এই পরবর্তীকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এর পেছনে থাকা ইতিহাস যদি আপনি জানতে পারেন তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও এই পাহাড়কে ছুঁতে মন চাইবে আপনার। ❍ এটি মূলত একটি অনুচ্চ একটি পাহাড়, যার গায়ে খোদাই করা হয়েছে আনুমানিক ৬৫টি ডানামেলা পাখির বিশাল ভাস্কর্য। পাখিদের এই অবয়ব এতটাই বিশাল যে দূর থেকে পাহাড়টি দেখলে মনে হয়, যেন প্রকৃতির বুকে পাখিদের মুক্ত উড্ডয়ন ধরা রয়েছে। একসময় এই পাহাড়ের নাম ছিল ‘মুরা বুরু’ তবে কালের প্রবাহে এটি ‘পাখি পাহাড়’ নামেই বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে। আধুনিক প্রযুক্তির গুগল ম্যাপে সার্চ করলেও আপনাকে এই পাখি পাহাড় নামেই সার্চ করতে হবে। ❍ সাধারণত যারা ভাস্কর্য বা শিল্পী হিসেবে পরিচিত তারা প্রস্তরখন্ডকে নিজের স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে নিজেদের শিল্পী সত্ত্বার পরিচয় দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটি ঘটেছে ঠিক উল্টো। পাথরটিকে যথাস্থানে রেখেই তাতে খোদাই করা হয়েছে বিভিন্ন আকৃতির পাখি। ১৯৯৭ সালে সরকারি আর্থিক অনুদানে কাজ শুরু করেন শিল্পী। সরকারি অনুদানের সঙ্গে তাঁকে অনুরোধ করা হয় কয়েকজন ভাস্কর্যশিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার জন্য।???????? ❍ কিন্তু প্রধান ভাস্কর চিত্ত দে মহাশয় পেশাগতভাবে দক্ষ শিল্পীদের বদলেস্থানীয় আদিবাসী লোকেদের সঙ্গে কাজ করার উপর জোর দেন। প্রথম চার বছর ধরে প্রায় পঞ্চাশ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলেও অবশেষে চব্বিশ জনকে নিয়ে দলবদ্ধ ভাবে কাজ শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের উপর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় এনামেল রং ব্যবহার করে ছবিগুলো আঁকেন। স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি এই পাহাড়ের শিল্পকর্ম ক্রমশ দূর দূরান্তের মানুষের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ❍ স্থানীয় কিছু গ্রামবাসীকে উপযুক্ত ট্রেনিং দেওয়ার পর শুধুমাত্র হাতুড়ি ও সামান্য কিছু সাধারণ যন্ত্রপাতি সম্বল করে খোদাইয়ের কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে ৬৫টি ডানামেলা পাখির ভাস্কর্য খোদাই করেন। যার সব চেয়ে ছোটো ডানার দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট আর সব চেয়ে বড়ো ডানার দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট। অযোধ্যা পাহাড় যেতে গেলে যে রাস্তাটির উপর দিয়ে যাওয়া হয় সেখান থেকে কিছুটা দূরে ডান দিক চোখ ফেরালেই এই পাখির শিল্পকর্ম চোখে পড়ে পাখি পাহাড়ের উপর। অসাধারণ এই শিল্পকর্ম দূর থেকে অনুভব করা যায়। ❍ চারদিকে ঘন জঙ্গল। শাল সেগুনে ভরা পাহাড়ি লাল রাস্তা। মাঝে মাঝে কাঠ কুড়ুনিদের দেখতে পাওয়া যাবে। দূর গ্রাম থেকে তারা আসেন প্রতিদিন কাঠ সংগ্রহের উদ্দেশে। পাখি পাহাড় শুধুমাত্র একটি পাহাড় নয়। এটি মানুষের সৃজনশীলতার এক অনন্য নিদর্শন। প্রকৃতির কোলে পাথরের ক্যানভাসে খোদাই করা এই শিল্পকর্ম শুধু পুরুলিয়া জেলার গর্ব নয়। এটি বাংলারও এক অমূল্য সম্পদ।
Follow Us Google News
View (3,646) | Like (0) | Comments (0)
Like Comment
Comment Box
Sponsor

For Ads

+01828-684595

www.fewlook.com

Fewlook is a world wide social media platform

Install FewLook Android Application

PlayStore Free Download Available

Install Now